চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংবাদদাতা: চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মা নদীর ভাঙন আবারও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। দীর্ঘ ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন চললেও প্রতিরোধে কার্যত কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। স্থানীয়রা বলছেন, চরাঞ্চলের দরিদ্র মানুষ যখন শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে, তখনও সংশ্লিষ্ট বিভাগের রহস্যজনক নীরবতা অবাক করেছে তাদের।
সরেজমিন ভাঙনকবলিত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের জাউনিয়া গ্রাম এলাকা থেকে খলিফা চর এর মাথা পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন চলছে। পানির স্রোত বেশি হওয়ায় ভাঙনের তীব্রতাও বেশি। আতঙ্কে পার্শ্ববর্তী নিশিপাড়া চরে স্থানান্তরিত হচ্ছে মানুষ।
স্থানীয়রা বলছেন, ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীনের হুমকিতে আছে সদর উপজেলায় নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদ, কমিউনিটি ক্লিনিক, নারায়ণপুর ইউনিয়ন সাব-সেন্টার, দোতলা বিশিষ্ট আশ্রয়ণকেন্দ্র, দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নারায়ণপুর এম এ উচ্চ বিদ্যালয়, নারায়ণপুর বাতাস মোড় বাজার সহ, কয়েক হাজার কৃষকের আবাদি জমিসহ পদ্মা পাড়ের পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষের বসতবাড়ি।
নারায়ণপুর ইউনিয়নের বান্না পাড়া এলাকায় তীব্র ভাঙন শুরু হয়। এরই মধ্যে আবাদি জমিসহ শতাধিক পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে সেখানে। নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজির হোসেন জানান, গত কয়েক দিনে ভাঙন তীব্র হওয়ায় ইউনিয়নের মানুষ খুবই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। এ পর্যন্ত শুধু বান্না পাড়া এলাকাতেই ৭০-৮০ টি বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। যে হারে নদীর পাড় ভাঙছে আমার এলাকার প্রায় ১৫-২০ হাজার মানুষ এখন আতঙ্কে দিন পার করছেন। পাউবোর সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু তাদের থেকে তেমন কোনো সাড়া পাচ্ছি না।
এই ইউনিয়নবাসী কোনো দান চায় না, শুধু স্থায়ী সুরক্ষা বাঁধ চায় বলে জানান, ১৩ নং নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাজির হোসেন।
রোববার পদ্মার বুকে বিলীন হয়ে গেছে বান্না পাড়ার বাসিন্দা আবদুল জব্বারের বাড়ি। তিনি বলেন, এই পদ্মার পাড়ে হাজার হাজার মানুষের বসবাস। প্রতি বছরই আমাদের এ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। অস্থায়ী জিও ব্যাগ ও টিউব ব্যবহার করে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এতে কোনো কাজই হয় না। উল্টো ভাঙন রোধের নামে সরকারের কোটি কোটি টাকা গচ্চা যায়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান আনান, পদ্মা নদীর ভাঙন ঠেকাতে আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই। কারণ অল্প টাকায় ছোটখাটো প্রকল্প দিয়ে কোনোভাবেই ভাঙন ঠেকানো যাবে না। আঙনের খবর সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। তিনি আরও বলেন, জরুরি ভিত্তিতে কাজ করার জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ে আমাদের প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি।
এখন পর্যন্ত সেটির অনুমোদন পায়নি। ওই এলাকায় পাঁচ কিলোমিটার জুড়ে ভাঙন চলছে। গত বছর আমরা সেখানে সামান্য কাজ করেছিলাম। কিন্তু সেটাতে ওই এলাকার ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়। গত বছর আমরা ২০ কোটি টাকার একটা প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য। সেটি আবার কমিয়ে আমাদের মন্ত্রণালয় অর্থ মন্ত্রণালয়ে ৯ কোটি টাকার প্রস্তাবনা পাঠিয়েছিল। সেটি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানত। কিন্তু আমরা সেখান থেকে আর অর্থ পাইনি। যে জন্য কাজটি করা সম্ভব হয়নি।