জুনে রেকর্ড রেমিটেন্স আসার সম্ভাবনা

অনলাইন ডেস্ক: ঈদুল আজহার আগে রেমিটেন্সের যে প্রবাহ ছিল তাতে কিছুটা ভাটা পড়েছে ঈদের পর। তারপরও যে হারে রেমিটেন্স আসছে তা অব্যাহত থাকলে একক মাস হিসাবে জুনে রিজার্ভের উৎসে রেকর্ড হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ মাসের প্রথম ২৩ দিনে রেমিটেন্স এসেছে ২০৫ কোটি (২.০৫ বিলিয়ন) ডলার। বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১১৮ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ২৪ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৮ কোটি ৯১ লাখ ডলার; টাকার হিসাবে ১ হাজার ৫২ কোটি। এই রেমিটেন্সের উপর ভর করে রিজার্ভ আরও বেড়েছে; বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ সাড়ে ১৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার রেমিটেন্সের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, জুনের ২৩ দিনে (১ থেকে ২৩ জুন) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ২০৫ কোটি ডলারের যে রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন, তার মধ্যে ঈদের আগে ১ থেকে ৭ জুনে এসেছিল ৭২ কোটি ৬২ লাখ ৯০ হাজার ডলার। ৮ থেকে ১৪ জুন দ্বিতীয় সপ্তাহে আসে ৯২ কোটি ৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার। ঈদের পর ১৫ থেকে ২১ জুন সপ্তাহে আসে ২৬ কোটি ৭৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার। পরের দুই দিন অর্থাৎ ২২ ও ২৩ জুন এসেছে ১৩ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। মাসের বাকি ৭ দিনে (২৪ থেকে ৩০ জুন) এই হারে এলে মাস শেষে রেমিটেন্সের অঙ্ক ২৬৭ কোটি (২.৬৭ বিলিয়ন) ডলার ছাড়িয়ে যাবে। যা হবে একক মাসের হিসাবে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স। ২০২০ সালের জুলাই মাসে এ যাবতকালের সবচেয়ে বেশি ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ (২.৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে।
তবে বরাবরই দুই ঈদের পর রেমিটেন্সের গতি কমে যায়। সে হিসাবে মাস শেষে রেমিটেন্সের অঙ্ক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা জানতে আরও কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে। এমনিতেই গত কয়েক মাস ধরে রেমিটেন্সের গতি ভালো ছিল; ঈদের আগে তা আরও বেড়েছে। গত মে মাসে ২২৫ কোটি (২.২৫ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল গত বছরের মে মাসের চেয়ে প্রায় ৩৩ শতাংশ বেশি। আগের মাস এপ্রিলের চেয়ে বেশি ছিল ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ। প্রতিদিনের গড় হিসাবে মে মাসের রেমিটেন্স ছিল ৭ কোটি ২৭ লাখ ডলার। একক মাস হিসাবে মে মাসের রেমিটেন্স ছিল দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তার আগের মাস এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৩০ লাখ ৬০ হাজার (২.০৪ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৬ কোটি ৮১ লাখ ডলার।
মার্চে ১৯৯ কোটি ৬৮ লাখ (১.৯৯ বিলিয়ন) পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল তিন মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। তার আগের দুই মাসে (জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি) ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স দেশে এসেছিল। জানুয়ারিতে এসেছিল ২ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। ফেব্রুয়ারিতে এসেছিল আরও বেশি, ২ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার।

আরও পড়ুনঃ   অতি বাম আর অতি ডান মিলে সরকার উৎখাতে কাজ করছে : শেখ হাসিনা

গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে প্রবাসীরা প্রায় ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার পাঠিয়েছিলেন। তার আগের দুই মাস অক্টোবর ও নভেম্বরেও ভালো রেমিটেন্স এসেছিল দেশে। অক্টোবরে এসেছিল ১৯৭ কোটি ৭৫ লাখ (১.৯৮ বিলিয়ন) ডলার। নভেম্বরে আসে ১৯৩ কোটি (১.৯৩ বিলিয়ন) ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) ২১ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা ছিল গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের এই ১১ মাসে ১৯ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ২০২২-২৩ অর্থবছরের পুরো সময়ে (জুলাই-জুন) ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে, যা ছিল তার আগের অর্থবছরের (২০২১-২২) চেয়ে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি।
রিজার্ভ বাড়ছে
প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর পাশাপাশি রিজার্ভের তথ্যও প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে তথ্য অনুযায়ী, গত ১৯ জুন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। এক সপ্তাহ আগে ১৪ জুন বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৪ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার। দুই সপ্তাহ আগে গত ৫ জুন বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ১৮ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৪ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়েছে ৩২ কোটি ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে বেড়েছে ২৬ কোটি ডলার। দুই সপ্তাহে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়েছে ৮৬ কোটি ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে বেড়েছে ৫৫ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভকে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’ রিজার্ভ হিসাবে দাবি করে। সবশেষ গত মার্চে আমদানির তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, ওই মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। সে হিসাবে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’ বর্তমানের ১৯ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ দিয়ে প্রায় চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।