মোহা: আসলাম আলী স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর বাঘায় সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির নামে অতিরিক্তি টাকা আদায়,অনিয়ম- দুর্নীতির প্রতিবাদসহ সরকারি ফি এর মাধ্যমে জমি রেজিষ্টির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সকাল সাড়ে ১১টায় উপজেলা সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের সামনে দলিল লেখক ও সর্বস্তরের জনসাধারনের ব্যানারে এই মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ শফিউর রহমান শফির সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন,উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড.লায়েব উদ্দীন লাভলু,বাঘা পৌর মেয়র আক্কাছ আলী,পাকুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান,মেরাজুল ইসলাম মেরাজ,কমিউনিষ্ট পার্টির নেতা বাবু প্রশান্ত পান্ডে,দলিল লেখক সমিতির সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম স্বপন।
আরও উপস্থিত ছিলেন,বাঘা পৌর আ’লীগ সাবেক সভাপতি,কামাল হোসেন,উপজেলা পরিষদ ভাইচ চেয়ারম্যান মোঃ মোকাদ্দেস আলী সরকার,সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি মাইনুল ইসলাম মুক্তা ও সানোয়ার হোসেন সুরুজ,বাঘা পৌর
প্যানেল মেয়র দুই (২) শফিউল রহমান শফি,আ’লীগ নেতা শাহ জামাল সরকার লিটন প্রমুখ।
এসময় বক্তারা বলেন,দলিল লেখক সমিতির নামে প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করে বছরের পর বছর ধরে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অনেকেই নিজের ভাগ্যের উন্নয়ন করেছেন। জনগনের ভোগান্তি কমাতে জনপ্রতিনিধি হিসেবে যাদের দেখ ভালের দায়িত্ব তারা না দেখে বরং নিজের পছন্দের লোককে নামমাত্র সমিতির সভাপতি-সম্পাদক বানিয়ে অবৈধ অর্থ উপার্জনে সহায়তা করেছেন। অনেক দলিল লেখক,কোন কাজ না করেই ভাগ নেন। সরকারি নিয়মেই দলিল সম্পাদন করতে ও সমিতি বিলুপ্তির দাবি করা হয়। তারা আরও বলেন,জমি ক্রেতা-বিক্রেতা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও লাভবান হন,যারা সমিতির নামে সভাপতি-সম্পাদকের চেয়ারে বসেন। সমিতির নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করা হয়। এতে দলিল লেখকরাও তাদের হিসাব বুঝে নিতে পারেননা। দলিল লেখক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কলিম উদ্দীন, বলেন,সমিতির নামে যেখানে অকল্যাণ হয়,আমরা এমন সমিতি চাইনি। মেরাজুল ইসলাম মেরাজ বলেন,স্থানীয় এক জন প্রতিনিধির মুঠোফোনের এসএমএসের মাধ্যমে সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির সভাপতি-সম্পাদক নির্ধারণ করা হয়। তিনি সাধারন জনগনের ভোগান্তির কথা না ভেবে,ভাবেন তার অনুসারি নেতাদের কথা। যারা দায়িত্ব পেয়েছেন,তারা সমিতির নাম ভাঙ্গিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা কামাই করে নিজের ভাগ্যের উন্নয়ন করেছেন। অনিবন্ধিত সমিতির নামে সকল অনৈতিক কার্যকলাপ বন্ধ করে সরকার নির্ধারিত ফি দিয়ে জমি রেজিষ্ট্রির কাজ করে জনগণের ন্যায্য অধিকার বুঝে দিতে হবে। আক্কাছ আলী বলেন,অনিয়মতান্ত্রিকভাবে সিন্ডিকেট করে দলিল লেখক সমিতির নামে টাকা আদায় করা হয়। বছরের পর বছর ধরে মানুষকে জিম্মি করে সরকারি ফি এর বাইরে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করতে হয়। যার অংশ পান সাব রেজিষ্টারসহ কতিপয় নেতারাও। এক্ষেত্রে সাবেক প্রতিমন্ত্রীর রাজনৈতিক এপিএসের নামও চলে এসেছে। তিনি বলেন,বর্তমান দলিল লেখক সমিতির সভাপতি শাহিনুর রহমান পিন্টুর ভিডিওতে বক্তব্যকালে বলতে শোনা গেছে,তাকে একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দায়িত্ব দিয়েছেন বলে। সরকার যখন জনগনের কল্যাণে কাজ করতে অঙ্গিকার বদ্ধ,সেখানে সংসদের ইশারায় রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির নামে জনগনের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু তিনি জনগনের ভোগান্তির কথা ভাবছেননা। আমরা সাধারন জনসাধারনকে সাথে নিয়ে জনকল্যাণে দুর্নীতিমুক্ত বাঘা উপজেলা গড়তে চাই। এজন্য প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন। অ্যাড. লায়েব উদ্দীন লাভলু বলেন,দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও দূর্নীতি বন্ধ করে,জনস্বার্থে রেজিষ্ট্রি অফিসের সামনে জমি রেজিষ্ট্রির সরকারি ফি এর তালিকা ঝুলিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বাস্তবতা উল্লেখ করে বলেন,চার লক্ষ টাকা দিয়ে যে জমি কেনা হয়েছে,সেই জমি রেজিষ্ট্রিতে চার লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে এমনও নজির আছে। এসব বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক,উপজেলা নির্বাহি অফিসার,সাব রেজিষ্ট্রারসহ সরকারের দায়িত্বশীল কর্তা ব্যক্তিদের সাথে কথা বলেছি। তারা যেন সরকারের ভাব মূর্তি রক্ষায় জনগনের ন্যায্য দাবি বিবেচনা করে পদক্ষেপ নিবেন। তা না হলে বাঘার সর্বস্তরের জনতা এককাতারে যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবেন। বর্তমানে দায়িত্ব পাওয়া দলিল লেখক সমিতির সভাপতি শাহিনুর রহামান পিন্টু বলেন,গুটি কয়েক দলিল লেখক পদ পদবির জন্য এমনটা করছে। বর্তমানে ১৬৫ জন দলিল লেখক রয়েছে। মাসে ৩০/৪০ টি দলিল হয়। যা দিয়ে একজন দলিল লেখকের চলেনা। অধিকাংশ দলিল লেখক তার সাথে রয়েছে। সভাপতি হিসেবে সকলের সুবিধা অসুবিধা বিবেচনা করে কাজ করবেন। উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার এএন নকিবুল আলম বলেন,সাব-রেজিষ্ট্রার অফিস ভূমি মন্ত্রনালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়। সমিতির বৈধতা নিয়ে জানতে চাইলে বলেন,এ বিষয়টি দলিল লেখকরাই ভালো জানেন। সমিতির মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে দলিল সম্পাদনের কথাও অস্বিকার করেন তিনি।
বাঘায় দলিল লেখক সমিতির নামে অতিরিক্ত টাকা আদায়ে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদে মানববন্ধন
