টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ: ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে ‘ভয়ংকর পিচ’ নিয়ে আতঙ্ক

নাসাউ স্টেডিয়ামে ভারত-আয়ারল্যান্ড ম্যাচের একটি দৃশ্য

অনলাইন ডেস্ক : টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ১০টি ম্যাচ হয়েছে, এর মধ্যে দুটি খেলা গড়িয়েছে নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়ামে। দুটি ম্যাচই হয়েছে লো স্কোরিং। তারচেয়ে বড় দুর্ভাবনার বিষয় আইসিসির এই মেগা প্রজেক্টে বসানো ‘ভয়ংকর পিচ’। যা নিয়ে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়েছে। আগে বিভিন্ন দেশের ক্রিকেট বিশ্লেষকরা এই পিচ নিয়ে প্রশ্ন তুললেও, এবার জোরেশোরে যোগ দিয়েছেন সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটাররা। কারণ একই ভেন্যুতেই যে বহুল প্রতিক্ষিত ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ হতে যাচ্ছে।

আগামী ৯ জুন নাসাউ স্টেডিয়ামে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশ গ্রুপপর্বের ম্যাচে মুখোমুখি হবে। যা নিয়ে উন্মাদনা চলছে অনেক আগে থেকেই। বড় টুর্নামেন্ট ছাড়া ভারত–পাকিস্তানের মুখোমুখি লড়াই দেখার সুযোগ না থাকায়, দর্শকদের মাঝেও এ নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই। তবে সেই রোমাঞ্চে পানি ঢালতে পারে নিউইয়র্কের ড্রপ–ইন পিচ। অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডের আদলে বানানো এই ২২ গজের আচরণ বুঝতেই হিমশিম খাচ্ছেন ব্যাটাররা।

গতকাল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আসরের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছিল রোহিত শর্মার ভারত। যেখানে আইরিশদের ৯৭ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ব্যাট করতে নেমে জশুয়া লিটলের শর্ট বল রোহিতের কাঁধে আঘাত করে। এর পরও অবশ্য রোহিত ব্যাটিং চালিয়ে যান। তবে ব্যথা বাড়তে থাকায় ফিফটি পূর্ণ করার পর রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। এ ছাড়া ভারতের জয় নিশ্চিত করা আরেক ব্যাটার রিষভ পান্তকেও উঁচু–নিচু বিভ্রান্তিকর বলে ভুগতে হয়েছে। এরপর থেকে সমানে ড্রপ–ইন পিচের সমালোচনায় নেমেছেন সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার ও বিশ্লেষকরা।

আরও পড়ুনঃ   সাফজয়ী নারী ফুটবল দলকে সংবর্ধনা দিলেন প্রধান উপদেষ্টা

এই ধরনের উইকেটে বড় ম্যাচ দেওয়া উচিৎ নয় বলে মন্তব্য করেছেন ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে, ‘আমার মনে হয় ভুল বোঝাবুঝির ভয় ছাড়াই বলতে পারি, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ এরকম উইকেটে হতে পারে না। আমি খুবই আশা করছি যে মাঝের উইকেটটা ভালো হবে। আপনি দেখেছেন রোহিত বাহুতে আঘাত পেয়েছে, রিশভও আঘাত পেয়েছে দুই-তিনবার। এটা একটা বড় টুর্নামেন্ট, তাদের (আইসিসি) কিছু একটা করা উচিৎ।’

ক্রিকবাজের এক অনুষ্ঠানে আইসিসির তুলোধুনো করেন সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার বীরেন্দর শেবাগ, ‘নিউইয়র্কে আপনি খেলা দিয়েছেন কেন? বিনোদনের জন্য তাই তো? আমেরিকানরা এসে বিনোদিত হবে…ইত্যাদি। কিন্তু কোনো মজাই তো হচ্ছে না। অ্যাডিলেডে বানানো হলে অ্যাডিলেডের মতো উইকেট হতে হতো। ৫০ ওভারের খেলায় যেখানে তিনশ’র বেশি রান হবে। টি-টোয়েন্টিতে অন্তত দেড়শ হবে। এই উইকেটের মান কে নির্ধারণ করেছে? আম্পায়ার? ম্যাচ রেফারি? ম্যাচ রেফারি তো আইসিসিরই। এরকম উইকেট ভারতে হলে তো কড়া নিন্দা হতো। ১৫-১৬ ওভারে ৯০ রানে অলআউট হয়ে যাচ্ছে। টি-টোয়েন্টিটা হচ্ছে বিনোদনের খেলা। তো আপনি এখানে বিনোদনই ছিনিয়ে নিচ্ছেন।’

চলতি বিশ্বকাপে আইসিসি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ধারাভাষ্য দেওয়ার দায়িত্ব পেয়েছেন দীনেশ কার্তিক। সম্প্রতি ক্রিকেটকে বিদায় জানানো সাবেক এই ক্রিকেটারও সমালোচনায় মুখর ক্রিকবাজের আলোচনায়, ‘এটি সেরা পিচ নয়। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সাধারণত পিচ হয়ে থাকে ব্যাটারদের অনুকূলে। কিন্তু এখানে বোলারদের অনুকূলে পিচ বানানোর সিদ্ধান্ত সঠিক নয়। এটি (পিচের মাটি) বেশ ফাঁপা এবং অতিরিক্ত বাউন্স মাথার ওপর দিয়ে যায়, আবার কখনও বলই ওঠে না তেমন। ড্রপ-ইন পিচে এখানে নতুন, কিন্তু ঠিকভাবে বসানো হয়নি। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আগে এ নিয়ে আরও আলোচনা উঠবে।’

আরও পড়ুনঃ   বাংলাদেশ-ভারত ১ম টি-টোয়েন্টি : একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা প্রশাসনের

কার্তিকের কথা টেনে নিয়ে পিচকে ভয়ঙ্কর ও বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেন ভোগলে, ‘এটি ভয়ংকর হয়ে উঠছে। ‘‘কার্তিক সেরা পিচ নয়’’ উল্লেখ করে বিনয় দেখিয়েছে। তাদের (আয়ারল্যান্ড) ১০–১১ নম্বরে নামা একজন ব্যাটার এমন একটি বল মুখোমুখি হয়েছিল, যেটাতে সামনের দিকে এগোলেও বল অতিক্রম করেছে মাথার ওপর দিয়ে। এ ধরনের বল অনেক বিপজ্জনক।’

এদিকে, আরেক সাবেক অলরাউন্ডার ইরফান পাঠানও স্টার স্পোর্টসে নাসাউয়ের পিচ নিয়ে কথা বলেছেন। অনেকটা ভোগলের সুরে ক্রিকেটারদের জন্য এই পিচ নিরাপদ নয় বলে জানান পাঠান, ‘আমরা অবশ্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেটের সম্প্রসারণ ঘটাতে চাই। তবে এই পিচ ক্রিকেটারদের জন্য নিরাপদ নয়। ভারতে যদি এরকম কোনো পিচে খেলতে হত, তাহলে বহুদিন সেই ভেন্যুর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হতো। কোনোভাবেই এই পিচ ভালো নয়। আর আমরা কোনও দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলছি না, বিশ্বকাপ খেলছি।’

সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইকেল ভনও চাঁচাছোলা ভাষায় মন্তব্য করেছেন নিউইয়র্কের পিচ নিয়ে, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেট বিক্রির কাজ চলছে। তবে এজন্য নিউইয়র্কের সাব-স্যান্ডার্ড পিচে ক্রিকেটারদের খেলতে হবে, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। বিশ্বকাপে খেলার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে এরকম পিচে খেলতে হচ্ছে, এটা বাজে ব্যাপার।’