স্টাফ রিপোর্টার : চতুর্থ ধাপে রাজশাহীর দুইটি উপজেলা চারঘাট-বাঘায় অনুষ্ঠিত হয়েছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। ভোট দিতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন রাজশাহী-৬ আসনের সাবেক এমপি। এছাড়া বাঘায় একটি কেন্দ্রে ভোট দিয়ে ব্যালট পেপার বাক্সে না ফেলে বাইরে নিয়ে আনার অভিযোগে তিনজনকে আটক করে পুলিশ।
সরেজমিনে ভোটকেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করে দেখা যায়, সকাল থেকে কেন্দ্র গুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। যাদের অধিকাংশই ছিলেন নারী ভোটার। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভোটার উপস্থিতি কমতে থাকে। বড় কোন সহিংসতা ছাড়াই রাজশাহীতে শেষ ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শেষ হয়েছে।
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় রাজশাহী-৬ আসনের সাবেক এমপি রায়হানুল হক রায়হানকে ভোটকেন্দ্রে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী ফখরুল ইসলামের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। রায়হানের অভিযোগের পর র্যাব ওই ভোট কেন্দ্রের বাইরে লাঠিচার্জ করে সবাইকে সরিয়ে দেয়। বুধবার বেলা পৌনে এগারোটার দিকে চারঘাট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটে।
রাজশাহী-৬ আসনের সাবেক এমপি রায়হানুল হক রায়হান বলেন, আমি বেলা সাড়ে দশটার পর পাইল কিট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে ঢুকি। এ সময় আমি দেখি কেন্দ্রে ঘোড়ার সমর্থক এবং ভোটারদেরকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। আমাকে দেখে ঘোরার প্রতীকের সমর্থকরা অভিযোগ করে। এ সময় আনারস প্রতিকের প্রার্থী ফখরুল ইসলামের সমর্থকরা আমার উপর হামলা চালায়। পরে ভোট দিয়ে এসে আমি প্রশাসনকে একাধিকবার বলার পরেও কেন্দ্র থেকে আনারস প্রতীকের সমর্থকদেরকে না সরিয়ে উল্টো ঘোড়া প্রতীকের সমর্থকদেরকে কেন্দ্র থেকে সরানো হয় এবং তাদের ওপর লাঠিচার্জ করা হয়।
ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া বিপ্লব বলেন, ভোটকেন্দ্রে আনারস প্রতীকদের প্রার্থীদের যেভাবে সমর্থন বা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থীকে সেভাবে দেয়া হচ্ছে না। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে আমি সন্দেহ প্রকাশ করছি।
আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও চারঘাট উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম বলেন, সাবেক এমপি রায়হানুল সাহেব এলাকার সবার কাছে সম্মানিত। তার গায়ে কেউ হাত দেবার বা তার উপর আক্রমণ করার প্রশ্নই আসে না। তবে ঘোড়া প্রতীকের কিছু উশৃংখল সমর্থক আছে তারা নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। এ সময় তিনি আরো জানান নির্বাচন সুশৃংখল পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
চারঘাট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রিজাইডিং অফিসার আনোয়ারুল হক বলেন, কেন্দ্রের মধ্যে কোন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। তবে স্বাভাবিকভাবেই ভোট গ্রহন সম্পন্ন হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-৬ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন শাহরিয়ার আলম। একই আসনে কাঁচি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন রায়হানুল হক। নির্বাচনে জয়লাভ করেন শাহরিয়ার আলম। এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ফখরুল ইসলামকে পরোক্ষভাবে সমর্থন দিয়ে রেখেছেন সাহারিয়ার আলম। আর ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে রেখেছেন রায়হানুল হক।
এদিকে বাঘায় ব্যালট পেপারসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে। বাঘা উপজেলার ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল মোকাদ্দেস এর ছেলে ও তার বন্ধুকে ব্যালেট পেপারসহ এবং পরে তাদের স্বীকারোক্তিতে আরও একজনকে কেন্দ্রের বাইরে থেকে আটক করে পুলিশ।
বুধবার দুপুরে বাঘা উপজেলা সদরে অবস্থিত বাঘা ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট দিয়ে ব্যালট পেপার বাইরে নিয়ে আসায় ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল মোকাদ্দেস (টিয়া) প্রতিক এর ছেলে চয়ন ও তার বন্ধু রাসেলকে বাঘা ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে থেকে আটক করেছে করেছে পুলিশ।
স্থানীয়রা জানান, এই কেন্দ্রে ভোট কেনা-বেচা হয়েছে। এ কারনে নির্ধারিত প্রতিকে ভোট দেওয়ার পর প্রার্থীর ছেলে ও তার বন্ধুর কাছে প্রমান হিসাবে ব্যালেট জমা দেয় দুইজন ভোটার। খবর পেয়ে পুলিশ ব্যালেট সহ তাদের আটক করে। এরপর আটককৃত দুই জনের স্বীকারোক্তিতে হাসান নামে অপর একজনকে আটক করে পুলিশ।
বাঘা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমিনুল ইসলাম জানান, আটককৃত তিনজনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে রাজশাহীর চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় মোট চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ৫ জন, ভাইস-চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ৯ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ৯ জন প্রার্থী রয়েছেন।
চারঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন ৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ৬ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ৬ জন। চারঘাট উপজেলার ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৬৩ টি। ভোট কক্ষের সংখা ৫০৭টি। মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৮০ হাজার ৪০৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯০ হাজার ৫৮৩ জন ও মহিলা রয়েছেন ৮৯ হাজার ৮১৯ জন এবং হিজড়া ১ জন।
এদিকে রাজশাহীর বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী ২ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী ৩ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী ৩ জনের মধ্যে নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাঘা উপজেলার ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৬৯ টি। মোট ভোট কক্ষের সংখা ৪৩০টি মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬৬৩ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮৩ হাজার ৭ জন, এবং নারী ভোটার সংখ্যা ৮২ হাজার ৬৫৬ জন।