স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে ৯টি অচল বাস। বাসগুলোর কোনো কোনোটা এ অবস্থায় রয়েছে ৭-৮ বছর ধরে। দিনদিন আরো বেশি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সেগুলো। তাই প্রশ্ন উঠেছে, বাসগুলো বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়না কেনো?
এবিষয়ে পরিবহন দপ্তরের একটি সূত্র বলছে, বাসের নিলামের সময় বাজারমূল্যের থেকে কম দামে কিনতে একটা সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাদের যোগসাজশে আশানুরূপ দরপত্র পড়েনা। পরবর্তীতে কম দামে বিক্রির দায়ে সমালোচিত হতে হয় দপ্তরের প্রশাসককে। তাই, সমালোচনার ভয়ে প্রশাসকরা সাধারণত চাননা, নিজের সময়ে নিলাম হোক। এজন্যই বাসগুলো পড়ে থাকে দীর্ঘদিন ধরে।
তবে, এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি পরিবহন দপ্তরের প্রশাসক। তিনি বলছেন, ১০-১৫ বছর পরপরই নিলাম ডাকা হয়। কারণ ২-১টা গাড়ির জন্য নিলাম প্রক্রিয়ায় গেলে বেনেফিট কস্টের দিক থেকে সুবিধা হয়না। আবার গাড়ির সংখ্যাটা বেশি নাহলে ভালো পার্টিও পাওয়া যায় না।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের পিছনে তিনটা এবং পরিবহন দপ্তর এলাকায় পড়ে রয়েছে ছয়টা অচল বাস। বাসগুলোর কোনোটির বিভিন্ন অংশের গ্লাস ভাঙা, কোনোটির চাকা মাটির নিচে দেবে গেছে। দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় বাসগুলোর ভেতরে-বাইরে জমেছে ধুলা-ময়লার স্তূপ। ধরেছে জং। খসে পড়ছে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। অনেক সিট ভেঙে গিয়েছে।
পরিবহন দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০১৮ সালে নিলামের মাধ্যমে ৫টি অচল বাস বিক্রি করা হয়। তবে, ওই বাসগুলোর নিলাম প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৬ সালে। তখন পাঁচটি অচল বাস বিক্রি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় হয়েছিল ৫ লাখ টাকার উপরে। এর আগের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১১-১২ সালের দিকে।
২০১৬ সালের পর থেকে অচল হওয়া গাড়িগুলোই বর্তমানে পড়ে আছে। চেসিস নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মূলত গাড়িগুলোকে অপসারণযোগ্য (রিমুভেবল) হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া, পুরাতন বাসগুলোর যন্ত্রাংশ বাজারে না পাওয়া যাওয়া ও জ্বালানি খরচ বেশি লাগা, মেরামতের খরচ বেড়ে যাওয়া, ফিটনেসে ঘাটতিসহ বিভিন্ন কারণে গাড়িগুলোকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এতোবছর ধরে পড়ে থাকলেও গাড়িগুলো কেনো বিক্রি করা হয়নি জানতে চাইলে চাইলে পরিবহন দপ্তরের প্রশাসক মোকছিদুল হক বলেন, প্রতিবছর নিলাম ডাকা হয়না। বেশি পরিমাণ অচল গাড়ি যখন একসাথে জমা হয়, তখন নিলাম ডাকা হয়। এটা সাধারণত ১০-১৫ বছর পরপরই হয়।
কারণ ২-১টা গাড়ির জন্য নিলাম প্রক্রিয়ায় গেলে বেনেফিট কস্টের (সুবিধার্থে ব্যয়) দিক থেকে সুবিধা হয়না। আর সরকারি সম্পত্তি বিক্রি করার কিছু প্রক্রিয়া আছে। এই প্রক্রিয়া আমরা প্রায় দুইবছর আগেই শুরু করেছি। তারপরও করোনা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন কারণেই আমরা এখনো প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি শেষ করতে পারিনি। শীঘ্রই পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে।
অচল গাড়ি দশ-পনেরো বছর পড়ে থাকলেতো আরো বেশি খারাপ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে বিক্রয়মূল্যও কমে যায়। এই ক্ষতির দায়টা কার জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব গাড়িতো দশ-পনেরো বছর ধরে পড়ে থাকেনা। দুই-চার মাস আগে অচল হয়েছে, এমন গাড়িও আছে। এছাড়া, একটা গাড়ির নিলাম প্রক্রিয়া এবং তার খরচ আর দশটা গাড়ির নিলাম প্রক্রিয়া ও তার খরচ প্রায় এক৷ এজন্য দুই-একটা গাড়ির জন্য নিলাম ডেকে খুব একটা সুবিধা হয়না। আবার গাড়ির সংখ্যাটা বেশি নাহলে ভালো পার্টিও পাওয়া যায় না।
২০২২ সালে নিলাম প্রক্রিয়া শুরু হলেও এখনো শেষ না হওয়ার কারণ কি জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, এতোদিন সময় লাগেনা, এটা ঠিক। কিন্তু এটাতো সরকারি সম্পত্তি। এখানে কোনো খুত রেখে কাজ করা যায়না। দ্রুত নিলাম প্রক্রিয়া শেষ করলে, পরে দেখা যায় যে অনেকে বলছে, ১০ লাখ টাকার জিনিস চার লাখে বিক্রি করা হয়েছে। এজন্য একটু সময় নিয়েই প্রক্রিয়াটা শেষ করা হয়েছে। এখন বিজ্ঞাপন পর্যায়ে রয়েছে।
এবিষয়ে পরিবহন দপ্তরের উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নাসিমা আখতার বলেন, পাঁচ মাস হলো আমি ওখানকার সভাপতি নিযুক্ত হয়েছি। এতোদিনেও কেনো অচল বাসগুলো বিক্রি করা হয়নি, সেটা আমি জানিনা। কয়টা বাস অচল হয়ে আছে, সেটাও জানিনা। এই সময়ের মধ্যে এরকম (অচল বাস নিলাম) কোনো বিষয় এজেন্ডাভুক্ত হয়নি। আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো বিষয়টা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, আমি নিজেও অনেক আগে পরিবহন দপ্তরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলাম। তখন দেখেছি, বাসের নিলামের সময় সিন্ডিকেট করে এমন দরপত্র বলা হয়, যেটা শুনে সবাই হাসবে বা অন্যরকম কিছু ভাববে। তাই, বিশ্বাসযোগ্য দাম না পাওয়া গেলে প্রশাসকদের সমালোচিত হতে হয়, এটা সত্য।
তিনি আরো বলেন, তাই বলে, এখন বাসগুলো বিক্রির উদ্যোগ নিতে হবেনা, এমন না। এগুলো বিক্রির উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আমি গত দেড় বছর ধরে বারবার বলে আসছি। কারণ, এগুলো ফেলে রেখেতো কোনো লাভ নেই। কিছুদিন পরে দেখা যাবে যে, বাসগুলোর জিনিসপত্র আর কিছুই নেই।
আবার জং ধরে নষ্ট হয়ে গেলে দাম আরো কম পাওয়া যাবে। বিক্রি বিলম্ব হওয়ার কারণ বিষয়ে দপ্তরটির উপদেষ্টা কমিটি ভালো বলতে পারবে। আর দপ্তরটি উপাচার্যের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। আমি এটার সঙ্গে সরাসরি জড়িত না।