স্টাফ রিপোর্টার : দরপত্র অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থাপন করার কথা ছিলো ‘এ’ গ্রেডের ফায়ার প্রটেকটেড’ লিফট। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে ‘সি’ গ্রেডের সাধারণ লিফট স্থাপন করা হয়েছে। এই জালিয়াতির বিষয়টি আলোচনায় আসার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে লিফট অপসারণের জন্য সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়ে চিঠি দিয়েছে গণপূর্ত দপ্তর। দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও সে লিফট অপসারণ করে এ গ্রেডের লিফট স্থাপন করা হয় নি।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নির্মাণাধীন নতুন আইসিইউ ইউনিটের একটি লিফট স্থাপনে এ জালিয়াতি ধরা পড়েছে। এ জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
কর্তৃপক্ষ বলছেন, এই লিফট বাতিল। এটি সরাতেই হবে। এ নিয়ে আগামী রোববার ঢাকায় একটি বৈঠক ডাকা রয়েছে। আবার পুনঃতদন্তের জন্য আরেকটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটিও রোববার রাজশাহীতে আসার কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হায়াত মুহাম্মদ শাকিউল আজম বলেন, এই লিফট বাতিল। এটি সরাতেই হবে।
এ বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফজলুল হক জানান, আগামী রোববার লিফট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বসা হবে। তারা এই লিফট অপসারণ করে নতুন একটি লিফট লাগিয়ে দেবে।
তিনি জানান, দরপত্রে ফায়ার লিফট (অগ্নি প্রতিরোধক) চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু এটা শুধু প্যাসেঞ্জার লিফট। এ লিফট সরাতেই হবে। ঠিকাদারকে দিয়েই লিফট আনার ব্যবস্থা করা হবে। কারণ এই লিফট বাইরে থেকে আনতে গেলে এখন দেড় কোটি টাকা লাগবে। কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করলে সরকারের দেড় কোটি টাকা গচ্চা যাবে।
বিষয়টিতে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে জানিয়ে ফজলুল হক জানান, লিফট আসার আগেই এটি পরিদর্শন করা হয়। এটাকে ‘পিএসআই’ বলে। গতবার করোনা পরিস্থিতির কারণে পিএসআই করা সম্ভব হয় নি। এই সুযোগটাই সম্ভবত ঠিকাদার কাজে লাগিয়েছেন। নিয়ম হলো যে দেশ থেকে লিফট আসবে, একজন কর্মকর্তা সেখানে গিয়ে কয়েকটি স্পেসিফিকেশনে স্বাক্ষর করে আসবেন। বাংলাদেশে এলে সেই কর্মকর্তা মিলিয়ে দেখবেন যে লিফটে তিনি সই করে দিয়েছিলেন, সেটিই এসেছে কিনা। তখন আর ২ নম্বরি করার কোনও সুযোগ থাকবে না। লিফট স্থাপনে জালিয়াতি ধরা পড়ার পর ৭ মে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে লিফটটি অপসারণের জন্য চিঠি দেয়া হয়। দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও ঠিকাদার লিফট অপসারণ করেন নি।
গত ১০ মার্চ ওই প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৬০০ কেজি প্যাসেঞ্জার কাম বেড লিফটের দরপত্র মোতাবেক স্পেসিফিকেশন আনুযায়ী সঠিক কি না, তা যাচাইয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ৬ মে এই কমিটির প্রতিবেদন পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী এই লিফট লাগানো হয় নি। চাওয়া হয়েছিল ‘এ’ গ্রেডের লিফট। সরবরাহ করা হয়েছে ‘সি’ গ্রেডের লিফট। এই দুই লিফটের দামের পার্থক্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা। আবার চাওয়া হয়েছিল ‘ফায়ার প্রটেকটেড’ লিফট। দেওয়া হয়েছে সাধারণ লিফট। এরইমধ্যে দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও লিফট অপসারণ করা হয় নি। এ বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে কেউই সদ্দুত্তর দেন নি।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহম্মদ বলেন, এই লিফট নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুব শিগগিরই নতুন লিফট স্থাপন করে দিবে বলে জানিয়েছেন।