অনলাইন ডেস্ক : এমপি আনারকে হত্যায় ৫ কোটিতে ঘাতক ভাড়া করা হয়: পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি
পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির মহাপরিদর্শক (আইজি) অখিলেশ চতুর্বেদী
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব কলকাতার বিলাসবহুল এক ফ্ল্যাটে ঝিনাইদহের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যায় তারই এক বন্ধু ঘাতকদের পাঁচ কোটি টাকায় ভাড়া করেন। ওই বন্ধু তাকে খুন করার জন্য ঘাতকদের এই টাকা দেন বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডির) জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা এই তথ্য জানিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেছেন, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তে দেখা জানা গেছে যে, এই সংসদ সদস্যকে হত্যার জন্য তারই এক বন্ধু ঘাতকদের প্রায় ৫ কোটি টাকা দিয়েছেন।
বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, ১৩ মে কলকাতায় নিখোঁজ হওয়া আনোয়ারুল আজীম আনারকে খুন করা হয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে ঢাকায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ বলেছে, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তের ভার রাজ্যের সিআইডিকে দেওয়া হয়েছে। সিআইডির জ্যেষ্ঠ ওই কর্মকর্তা ভারতীয় বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) বলেছে, এটা সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তাকে হত্যার জন্য মোটা অংকের টাকা, প্রায় ৫ কোটি টাকা দিয়েছিলেন সাংসদের এক পুরোনো বন্ধু।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের এই এমপির বন্ধু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এবং কলকাতার একটি ফ্ল্যাটের মালিক। এর আগে বুধবার পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির মহাপরিদর্শক (আইজি) অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, আনোয়ারুল আজীমকে খুন করা হয়েছে বলে আমাদের কাছে নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। কিন্তু আমরা তদন্তে এসে শনাক্ত করা ফ্লাটে তার লাশ পাইনি।
কলকাতার উপকণ্ঠে নিউ টাউনের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে পুলিশ রক্তের দাগ খুঁজে পেয়েছে কি না; সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, আমাদের ফরেনসিক দল অপরাধের সন্দেহজনক স্থান পরীক্ষা করছে। এই বিষয়ে আগাম কথা বলা যাবে না।
গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় যান আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল। এরপর থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন তিনি। পরে ১৮ মে থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন সংসদ সদস্যের পরিচিত ভারতের বরাহনগরের বাসিন্দা ও স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাস। এরপর আনোয়ারুল আজিম আনারের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে কলকাতা পুলিশ।
অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত যে তথ্য পেয়েছি তাতে সাংসদ আনোয়ারুল আজীম ১২ মে কলকাতায় এসেছেন। পরে এখানে এসে ভাড়া ফ্ল্যাটে ওঠেন। তবে এখানে এখন পর্যন্ত কোনও মরদেহ পাওয়া যায়নি। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, আনোয়ারুল আজীম ১২ মে এখানে এসেছিলেন। তার আগে এসেছিলেন কি না সেটি পরিষ্কার নয়।
গোয়েন্দা তথ্য বলছে, গত ১২ মে কলকাতায় যাওয়ার পর আনোয়ারুলকে কৌশলে ওই ফ্ল্যাটে নেওয়া হয়। পরে সেদিনই সেখানে তাকে হত্যার পর লাশ কয়েক টুকরা করে ব্যাগে ভরে সরানো হয়। অখিলেশ চতুর্বেদী বলেছেন, রাজ্য সিআইডি নিউ টাউনের ফ্ল্যাটের ভেতরে রক্তের দাগ খুঁজে পেয়েছে এবং কয়েকটি প্লাস্টিকের ব্যাগও উদ্ধার করেছে। লাশের টুকরা সরিয়ে ফেলার জন্য এসব ব্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন।
পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির ওই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, এমপি আনোয়ারুল আজীমকে প্রথমে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় বলে ঘটনাস্থলে পাওয়া আলামতে ইঙ্গিত মিলেছে। পরে তার মৃতদেহ কয়েক টুকরা করে ব্যাগে ভরা হয়।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুল আজীম গত ১২ মে সন্ধ্যা ৭টার দিকে কলকাতায় তার পারিবারিক বন্ধু ও কলকাতার স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাসায় যান। পরের দিন, ১৩ মে চিকিৎসক দেখাতে হবে জানিয়ে দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে গোপালের বাড়ি থেকে বের হন আনোয়ারুল। সন্ধ্যায় ফিরবেন বলেও জানান তিনি। পরে বিধান পার্কের কাছে কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে থেকে ট্যাক্সিতে উঠেছিলেন তিনি।
চলে যাওয়ার পর সন্ধ্যায় আজিম তার বন্ধু গোপালকে জানান, তিনি দিল্লি যাচ্ছেন এবং সেখানে পৌঁছে তাকে ফোন করবেন। পরে তার সঙ্গে ভিআইপিরা আছেন জানিয়ে বন্ধু গোপালকে ফোন না দেওয়ার জন্য বলেছিলেন। গত ১৫ মে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তায় এমপি আনোয়ারুল গোপালকে বলেন, তিনি দিল্লি পৌঁছেছেন এবং ভিআইপিদের সাথে আছেন। তাকে ফোন করার দরকার নেই। একই বার্তা পাঠিয়ে দেন বাংলাদেশে তার ব্যক্তিগত সহকারী রউফের কাছেও।
১৭ মে আনোয়ারুলের পরিবার তার সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে গোপালকে ফোন করেন। ওই সময় তারা গোপালকে বলেন, তার সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না তারা। পরিবারের পক্ষ থেকে ওই দিনই ঢাকায় থানায় অভিযোগ করা হয়। এরপর থেকে এমপি আনোয়ারুলের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।