বাড়ি ফিরেছেন জয়, একমাত্র ছেলেকে পেয়ে আনন্দের সীমা নেই মা-বাবার

স্টাফ রিপোর্টার : সোমালিয়ার জলদস্যুদের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে মঙ্গলবার (১৪ মে) দেশে ফিরেছেন এমভি আব্দুল্লাহ’র ২৩ নাবিক। তাদের একজন নাটোরের জয় মাহমুদ। অর্ডিনারি সিম্যান হিসেবে কাজ করেন তিনি। চট্টগ্রাম থেকে রওনা হয়ে বুধবার (১৫ মে) ভোরে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার সালাইনগর দক্ষিণপাড়া গ্রামে তার পরিবারের কাছে ফিরেছেন।

পরিবারের একমাত্র ছেলে বাড়ি ফেরায় সকাল থেকে জয় মাহমুদের পরিবারে চলছে উৎসবের আমেজ। সন্তান জয় মাহমুদকে কাছে পেয়ে আনন্দের যেন সীমা নেই মা আরিফা বেগমের। আদর সোহাগ করে বরণ করে নেন নিজ সন্তানকে। জয় মাহমুদের ফিরে আসার খবর ছড়িয়ে পড়লে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাকে এক নজর দেখার জন্য তার বাড়িতে ভিড় জমান। জয় মাহমুদকে কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন স্বজনসহ প্রতিবেশীরা। তার ফিরে আসায় অনেকেই আনন্দ প্রকাশ করেন।

বুধবার দুপুরে নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জিম্মিদশার অভিজ্ঞতার কথা জানান জয় মাহমুদ। তিনি বলেন, যখন আমাদেরকে জলদস্যুরা তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়, তখন থেকে আমরা কেউ স্বপ্নেও ভাবিনি জীবিত বাংলাদেশে ফিরব। এরপর যখন আমাদের ফোন নিয়ে নেয় তখন আরও চিন্তিত হয়ে পড়ি। সব সময় ভাবতাম পরবর্তী ধাপ কী হবে। এরপর ঈদ চলে এলে শুধু নামাজ পড়েছি, ঈদের আনন্দ করতে পারিনি। ছাড়া পেয়ে সেই ঈদের আনন্দ আল্লাহ যেন এখন দিয়েছেন। আমাদের ফিরিয়ে আনাতে সিও স্যারসহ যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।

আরও পড়ুনঃ   রাজশাহীতে লিটনসহ ৪৪১ জনের নামে মামলা

জয় মাহমুদের চাচাতো ভাই মারুফ হোসেন বলেন, বাড়িতে অন্য কারও স্মার্ট ফোন না থাকায় আমার ফোন দিয়েই সব সময় ভাই কথাবার্তা বলতেন। জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর থেকে আমাদের বাড়িতে আনন্দ নামের জিনিসটা হারিয়ে গিয়েছিল। এখন ভাই ফিরে এসেছে। আমরা অনেক খুশি।

জয় মাহমুদের বাবা জিয়াউর রহমান বলেন, ছেলেদের ডাকাতদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর চিন্তিত হয়ে পড়ি। আল্লাহর রহমতে ছেলে বাড়ি ফিরেছে। সরকার ও জাহাজের মালিক পক্ষের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তাদের চেষ্টায় দ্রুত আমার সন্তান বাড়িতে ফিরেছে।

জয়ের মা আরিফা বেগম বলেন, আমার বুকের ধন আমার বুকে ফিরে এসেছে, এটাই বড় আনন্দ। এর চেয়ে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না। আল্লাহ যে আমার বুকের মানিককে ফিরে দিয়েছেন এই জন্য তার দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া।

আরও পড়ুনঃ   হাইটেক পার্কসহ অপরিকল্পিত ব্রিজ নির্মাণে ক্ষতিগ্রস্ত চলনবিল

প্রসঙ্গত, কার্গো নিয়ে আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ দুপুরে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজকে জিম্মি করে সোমালিয়ার দস্যুরা। অস্ত্রের মুখে দস্যুরা সেখানে থাকা ২৩ নাবিককে একটি কেবিনে আটকে রাখে। আটকের পর জাহাজটিকে সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জিম্মিকালীন সময়ে মালিকপক্ষের তৎপরতায় সমঝোতা হয় জলদস্যুদের সঙ্গে।

এরপর গত ১৪ এপ্রিল ভোরে জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হন এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজসহ ২৩ নাবিক। এরপর জাহাজটি পৌঁছে দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরে। সেখান থেকে মিনা সাকার নামের আরেকটি বন্দরে চুনা পাথর ভর্তি করার পর চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। সব মিলিয়ে ৬৫ দিন পর মুক্ত নাবিকরা বাংলাদেশে এসে স্বজনদের কাছে ফিরলেন।