করোনা টিকা কোভিশিল্ডে ভয়াবহ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

অনলাইন ডেস্ক : ব্রিটিশ-সুইডিশ ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কোভিশিল্ড নেওয়া মানুষের শরীরে অত্যন্ত বিরল টিটিএসের উপসর্গ দেখা দিতে পারে
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্রিটিশ-সুইডিশ ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকা কোভিশিল্ডে ভয়াবহ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা বলেছেন, এই টিকার একটি বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো মানুষের শরীরের রক্ত জমাট বাধার ব্যাধি থ্রম্বোসিস থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিন্ড্রোমে (টিটিএস) আক্রান্ত হওয়া। টিটিএসের কারণে মানুষের মস্তিষ্কসহ শরীরের জটিল কিছু জায়গায় রক্ত জমাট বাধার ঘটনা ঘটে।

সম্প্রতি ব্রিটেনের একটি আদালতে জমা দেওয়া নথিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকাও বলেছে, তাদের তৈরি করোনা টিকা কোভিশিল্ড নেওয়া মানুষের শরীরে অত্যন্ত বিরল টিটিএসের উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

এর আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকা কোভিশিল্ডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি এই করোনা টিকা উৎপাদন করেছে ভারতীয় টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া।

মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যাস্ট্রাজেনেকা প্রথমবারের মতো আদালতের নথিতে স্বীকার করেছে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যৌথভাবে তৈরি করা তাদের করোনা টিকা কোভিশিল্ড বিরল ও গুরুতর রক্ত ​​​​জমাট বাধার ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে।

আরও পড়ুনঃ   যুদ্ধে ইউক্রেন ৪১০ সৈন্য হারিয়েছে: রাশিয়া

ভারতে কোভিশিল্ড নামে পরিচিত এ টিকা সাধারণ সর্দিজ্বরের ভাইরাসের একটি দুর্বল সংস্করণ থেকে তৈরি। এটি শিম্পাঞ্জির দেহে হয় এবং এর নাম অ্যাডেনোভাইরাস। এতে সরাসরি ভাইরাসের প্রোটিন যাতে শরীরে ঢুকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে না পারে, সে কারণেই অন্য একটি ভাইরাসকে ভেক্টর হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ভারতে কোভিশিল্ড উৎপাদন ও বাজারজাত করা হয়। ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশকে করোনার এই টিকা দেওয়া হয়েছে। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঈশ্বর গিলাদা ভারতীয় বার্তা সংস্থা আইএএনএসকে বলেছেন, টিটিএস এক ধরনের বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। টিটিএসের অত্যন্ত গুরুতর প্রভাব রয়েছে।

কোভিশিল্ড টিকা সরাসরি মানুষের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। এর ফলে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় এবং রক্ত জমাট বাধায় কাজ করে এমন প্রোটিনকে আক্রান্ত করে কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটায়।

তিনি বলেন, এই ধরনের বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রতি ৫০ হাজার জনের মধ্যে একজনেরও (০.০০২ শতাংশ) কম মানুষের শরীরে দেখা দেয়। তবে বিশাল জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে সেই সংখ্যা বড় আকার ধারণ করে।

আরও পড়ুনঃ   শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু

ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের জাতীয় কোভিড-১৯ টাস্ক ফোর্সের কো-চেয়ারম্যান চিকিৎসক রাজীব জয়দেবান আইএএনএসকে বলেছেন, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার অস্বাভাবিক একটি প্রতিক্রিয়া হলো টিটিএস। এটা অত্যন্ত বিরল এক অবস্থা। যদিও এই প্রতিক্রিয়ার পেছনে বিভিন্ন ধরনের কারণ রয়েছে। এটি অ্যাডেনোভাইরাস ভেক্টর ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও ঘটছে বলে ২০২১ সালের ২৭ মে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

ব্রিটিশ-সুইডিশ ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের আদালতে অন্তত ৫১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকা মানুষের মৃত্যু ঘটাতে এবং গুরুতর অসুস্থতা তৈরি করতে পারে বলে দাবি করা হয়েছে। এই টিকার ভুক্তভোগী ও মৃতদের স্বজনরা অ্যাস্ট্রাজেনেকার কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। আর এই ক্ষতিপূরণের অর্থ ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত হতে পারে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

একেবারে বিরল ক্ষেত্রে কোভিশিল্ড মানুষের শরীরে টিটিএসের কারণ হতে পারে বলে গত ফেব্রুয়ারিতে আদালতের কাছে জমা দেওয়া নথিতে স্বীকারও করেছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। টিটিএসের কারণে মানুষের রক্ত ​​জমাট বাঁধে এবং রক্তের প্ল্যাটিলেট হ্রাস পায়।