অনলাইন ডেস্ক : মিলান ডার্বিতে এসি মিলানকে ২-১ গোলে পরাজিত করে ইতালিয়ান সিরি-এ শিরোপা জয় করেছে ইন্টার মিলান। এনিয়ে টানা ষষ্ঠ ডার্বিতে জয়ী হলো ইন্টার।
ফ্রান্সেসকো আকারবি ও মার্কোস থুরামের গোলে ইন্টারের জয় নিশ্চিত হয়। এই জয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা মিলানের চেয়ে ১৭ পয়েণ্ট এগিয়ে থেকে ইন্টার পাঁচ ম্যাচ হাতে রেখে ২০তম লিগ শিরোপা জয় করার কৃতিত্ব দেখালো।
২০২১ সালে ইন্টার সিরি-এ শিরোপা জয় করেছিল। এরপরের দুটি শিরোপা যায় এসি মিলান ও নাপোলির ঘরে।
কোচ হিসেবে সিমোনে ইনজাগির এটাই প্রথম লিগ শিরোপা। যে কারনে সান সিরোর ৭৫ হাজার এ্যাওয়ে সমর্থকদের সামনে ইনজাগির উচ্ছাসটা ছিল একটু বেশী। শেষ বাঁশি বাজার সাথে সাথে ইন্টার সমর্থকরা উচ্ছাসে ফেটে পড়ে, এসময় গ্যালারি আতশবাঁশির আওয়াজ ও রঙে মুখরিত হয়ে উঠে।
ম্যাচ শেষের ১০ মিনিট আগে ফিকায়ো টোমোরির গোলে মিলান শেষ মুহূর্তে লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিয়েছিল। কিন্তু উত্তেজনাকর ম্যাচটিতে শেষ হাসি হাসে ইন্টার। দুই দল মিলে কাল তিনটি লাল কার্ড দেখেছে।
আবেগ আপ্লুত ইন্টার অধিনায়ক লটারো মার্টিনেজ বলেছেন, ‘আমি একটু বেশী আবেগী হয়ে পড়েছি। কারন এই দিনটির জন্য আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছি। এই জয়টা আমাদের প্রাপ্য ছিল। পুরো যাত্রাটা অভূতপূর্ব ছিল। আমাদের এই ধারা বজায় রাখতে হবে। কারন আমরা বেশ কিছু শিরোপা জয় করেছি। আরো শিরোপা জয়ের ক্ষুধা আমাদের মধ্যে আছে।’
দ্বিতীয় দল হিসেবে ইন্টার ২০টি ইতালিয়ান শিরোপা জয় করেছে। এই তালিকায় ৩৬টি শিরোপা জিতে শীর্ষে আছে জুভেন্টাস।
ইনজাগির দল অনেকটা দাপটের সাথেই এই শিরোপা ঘরে তুলেছে। প্রতিপক্ষ দলগুলোকে বেশ খানিকটা পিছনে ফেলে প্রথম দল হিসেবে মিলান ডার্বিতে শিরোপা নিশ্চিতের রেকর্ড গড়েছে। আর এই পরাজয়ে ইনজাগির প্রতিপক্ষ সিমোনে পিওলি বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।
২০২২ সিরি-এ শিরোপা জয়ী পিওলি বলেছেন, ‘গণমাধ্যমের সূত্র অনযায়ী ১৪ মাস আগে ইনজাগি দলে জায়গা ধরে রাখা নিয়ে প্রচন্ড চাপের মধ্যে ছিল। আর এখন সে কি অর্জন করেছে। আমি এখানে থেকে খুশী। আমি দলকে নিয়ে ভাল কাজ করেছি, আমার মনে হয়েছে অল্প কিছু জায়গায় দলের উন্নতির প্রয়োজন আছে।’
আগেই শিরোপা দৌড় থেকে ছিটকে গিয়েছিল আগের চ্যাম্পিয়ন নাপোলি। জুভেন্টাস অবশ্য লড়াইয়ে আভাস দিয়েছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে তারা হঠাৎ করে ছিটকে যায়। ইন্টার সব মিলিয়ে টানা ১৩টি জয় তুলে নিয়ে অন্য দলগুলোর সাথে পয়েন্টের ব্যবধান বাড়িয়ে নেয়।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে অবশ্য ইন্টারকে বিদায় নিতে হয়েছে। মার্চে এ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের কাছে হেরে তারা বিদায় নেয়। কিন্তু ঐ সময়ের মধ্যে ঘরোয়া লিগের শিরোপা অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল।
ইনজাগি, মার্টিনেজ ও ইতালিয়ান মিডফিল্ডার নিকোলো বারেলার ভবিষ্যত এর মাধ্যমে প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছে। ট্রান্সফার মার্কেটে তারা চুক্তি নবায়নের দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। কোভিড মহামারীতে যে পরিমান আর্থিক ক্ষতি ক্লাবটির হয়েছে তা কাটিয়ে ওঠাও এই শিরোপা মাধ্যমে সম্ভব হবে বলে সকলের বিশ^াস। মৌসুমের শেষে নাপোলি থেকে পিওতর জিলেনিস্কি ও মেহদি টারেমি ফ্রি এজেন্ট হিসেবে দলে আসা নিশ্চিত হয়েছে। বড় তারকা হিসেবে থুরামও দলে টিকে থাকছেন।
থুরাম বলেছেন, ‘সত্যিই অভাবনীয় এক অনুভূতি। আমরা আমাদের সমর্থকদের জন্য এটা জয় করতে চেয়েছিলাম, সেটা করে দেখিয়েছি। এটা আমার প্রথম লিগ শিরোপা। এ কারনেই আমি বেশি গর্বিত।’
ম্যাচের ১৮ মিনিটে বেঞ্জামিন পাভার্ডের ফ্লিক-অনে আকারবি গোল করলে ইন্টারের পার্টি তখনই শুরু হয়ে যায়। সাত মিনিট পর ফেডেরিকো ডিমারকোর নিখুঁত কাট-ব্যাক থেকে লটারো মার্টিনেজ বল ধরতে ব্যর্থ হলে ব্যবধান দ্বিগুন করা হয়নি। থুরামও একইভাবে গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন। বারেলার পাসে বিরতির সাত মিনিট আগে থুরামের শট অল্পের জন্য পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়।
বিরতির পরপরই থুরাম আর কোন ভুল করেননি। ৪৯ মিনিটে দুর্দান্ত একক গোলে তিনি ব্যবধান দ্বিগুন করেন। সিরি-এ অভিষেক মৌসুমে এনিয়ে ১২ গোল করলেন ফরাসি এই ফরোয়ার্ড। থিও হার্নান্দেজের একটি জোড়ালো শট রুখে দেন ইন্টার গোলরক্ষক ইয়ান সোমার। ৮০ মিনিটে টোমোরি ফিরতি একটি বলে মাথা ছুইয়ে এসি মিলানের হয়ে এক গোল পরিশোধ করেন। ইনজুরি টাইমে মিলান ম্যাচে ফিরে আসার লড়াই ছাপিয়ে মাথা গরম করা শুরু করে। যে কারনে থিও হার্নান্দেজ ও ডেভিও কালাব্রিয়াকে লাল কার্ড দেখতে হয়েছে। ইন্টারের ডেনজেল ডামফ্রাইয় শেষ মুহূর্তে লাল কার্ড পেয়েছেন।