মেয়েকে খুঁজতে এসে মা কারাগারে, সংবাদ সম্মেলনে কাঁদলেন অসহায় বাবা

অনলাইন ডেস্ক : স্কুলপড়ুয়া অপহৃত মেয়ের সন্ধান চেয়ে প্রশাসনের প্রতি আকুতি জানিয়েছে তুহিন ইসলাম নামে এক অসহায় বাবা। একই সঙ্গে গ্রাম থেকে মেয়েকে খুঁজতে এসে রংপুরে অপহরণকারী চক্রের ফাঁদে প্রতারিত হয়ে মাদক মামলায় কারাগারে থাকা নিজ স্ত্রীর মুক্তিসহ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবিও জানিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে রিপোর্টার্স ক্লাব রংপুরের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কাঁদতে কাঁদতে সাংবাদিকদের কাছে পুলিশের সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ তুলে ধরেন ওই ব্যক্তি।

তুহিন ইসলাম নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের মৌলভীপাড়া উত্তর বড়ভিটা গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি নৈশ্যপ্রহরী, তার স্ত্রী বাড়িতে দর্জির (কাপড় সেলাই) কাজ করেন। পাঁচ সদস্যের অভাবের সংসারে মেয়েকে পড়াশোনা করাতে স্থানীয় বড়ভিটা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলে ভর্তি করেন তিনি। নবম শ্রেণিপড়ুয়া নাবালিকা ওই মেয়ে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় নিজ বাড়ির সামনে থেকে অপহরণের শিকার হন।

তুহিন ইসলামের দাবি, একই গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে আরিফুল ইসলাম এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। ঘটনার ৬ দিন পর ২ মার্চ কিশোরগঞ্জ থানায় অভিযোগ করতে গেলে পুলিশ তা গ্রহণ করেনি। পরে ৪ মার্চ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ নীলফামারীতে মামলা দায়ের করেন। যা বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। এদিকে ঘটনার ৫২ দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত অপহৃতা মেয়ের কোনো সন্ধান না পাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা।

আরও পড়ুনঃ   ক্ষেতলাল উপজেলায় স্কুলছাত্রের মরদেহ মিলল সেতুর নিচে

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তুহিন ইসলাম বলেন, একই গ্রামের আরিফুল ইসলাম (২২) দীর্ঘদিন ধরে তার স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে বিভিন্ন ভাবে উত্যক্ত করে আসছিল। বিষয়টি তার বাবা জয়নাল আবেদীনকে জানালে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো তারা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। বিভিন্নভাবে হয়রানি ও হুমকি-ধামকি দেখানোসহ বাড়িঘরে আগুন দিয়ে উচ্ছেদ করার ভয়ভীতি দেখায় আরিফুলের পরিবার। হঠাৎ ২৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে বাড়ির বাহির বের হলে পূর্ব থেকে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আমার মেয়েকে জোরপূর্বক আরিফুল অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর থেকে অনেক জায়গায় খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন মারফতে সন্ধানের চেষ্টা করে এখন পর্যন্ত অপহৃতা মেয়েকে পাওয়া যায়নি। এরই মধ্যে জয়নাল ও আরিফুল চক্রের লোক লাভলু মিয়ার ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পড়েন তার স্ত্রী সেলিনা বেগম।

তুহিন ইসলাম বলেন, অপহৃতা মেয়েকে রংপুরে পাওয়া গেছে এমন সংবাদ দিয়ে আমার সহজ সরল স্ত্রীকে গ্রাম থেকে নিয়ে শহরে আসেন লাভলু মিয়া। পরে কৌশলে একটি শপিং ব্যাগ সেলিনার হাতে ধরিয়ে দিয়ে সটকে পড়নে ওই ব্যক্তি। এর কিছুক্ষণ পর কোতোয়ালি থানা পুলিশ আমার স্ত্রীকে আটক করে ওই শপিং ব্যাগ থেকে ২৫ গ্রাম গাঁজা ও ১০ হাজার জাল টাকার নোট উদ্ধার করেন। ওই ঘটনায় বর্তমানে আমার স্ত্রী কারাগারে রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ   ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিচয় না পাওয়া শহীদদের তথ্য বের করতে হবে’

তিনি আরও বলেন, আমি এবং আমার স্ত্রীসহ পরিবারের আমরা কেউই মাদক কারাবারির সঙ্গে জড়িত না। অপহৃতা মেয়েকে খুঁজতে এসে আমার স্ত্রী কারাগারে। আর আমি ন্যায় বিচার চেয়ে এখন প্রশাসনের কাছে ধর্ণা দিচ্ছি। আমি প্রশাসনের কাছে ওই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি। একই সঙ্গে আমার অপহৃত মেয়ের সন্ধান এবং জড়িতদের শাস্তি চাই।

সংবাদ সম্মেলনে তুহিন ইসলামের পরিবারের সদস্য, আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা উপস্থিত ছিলেন। অপহরণের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে জয়নাল আবেদীনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে লাভলু মিয়ার মুঠোফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া গেছে।

রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানা পুলিশের এসআই (নিরস্ত্র) মো. আব্দুল হালিম মিয়া বলেন, আসামি সেলিনা বেগমকে মাদক ও জাল টাকার নোটসহ আটক করা হয়। তার প্রাথমিক স্বীকারোক্তি ও তথ্য মতে লাভলু নামে আরেকজন জড়িত রয়েছে। তাকেও আসামি করা হয়েছে। আসামি সেলিনা বেগম যদি কারও ষড়যন্ত্রের শিকার বা প্রতারণার ফাঁদে পড়ে থাকেন সেটা তাকে আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে।