অনলাইন ডেস্ক : ইরানের সাম্প্রতিক শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে ইসরায়েলকে রক্ষায় সৌদি আরব কাজ করেছে বলে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কেএএন নিউজের খবরে দাবি করা হয়। তবে এই বিষয়টির সাথে সংশ্লিষ্ট সৌদির একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্র ইসরায়েলকে রক্ষায় সৌদি আরবের পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিকে অস্বীকার করেছে। সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংবাদপত্র আল-আরাবিয়ার খবরে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
দেশটির আরেক সংবাদমাধ্যম আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সংবাদ মাধ্যমে সৌদি আরবের সরকারি একটি ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে একদিন আগে ওই খবর প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, ইরানের আক্রমণ থেকে ইসরায়েলকে রক্ষা করার জন্য প্রতিরক্ষা জোটে অংশ নিয়েছে সৌদি আরব। কিন্তু সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সূত্রগুলো এই তথ্য অস্বীকার করেছে।
এর আগে, ওই ওয়েবসাইটে বলা হয়, ইরানের ছোড়া ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে সৌদি আরব নিজেদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহারের পাশাপাশি ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, জর্ডান, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সমন্বয়ে গঠিত সামরিক জোটকে সহযোগিতা করেছে।
সহযোগিতার কারণ হিসেবে কেএএন নিউজ বলেছে, ‘‘সৌদি আরব মনে করে, গাজায় সংঘাত শুরুর পর থেকে ইরান এই সংঘাতে ফায়দা তোলার পরিকল্পনা করছে এবং সম্প্রতি যে হামলা তেহরান পরিচালনা করেছে, তা সেই পরিকল্পনার অংশ।’’
সৌদির একাধিক সূত্র আল-আরাবিয়াকে বলেছে, ‘‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের চালানো হামলা ঠেকাতে সৌদির অংশগ্রহণ সম্পর্কে যে ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে, আসলে সৌদি আরবের এমন কোনও সরকারি ওয়েবসাইটই নেই।’’
গত ১৩ এপ্রিল ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) ইসরায়েলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। তার আগে ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেট ভবনে হামলা চালায় ইসরায়েল। এই হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর অভিজাত শাখা কুদস ফোর্সের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদিসহ কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা নিহত হন।
দামেস্কে হামলার প্রতিশোধে ইসরায়েলে শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। তবে ইরানের বেশির ভাগ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি ভূখণ্ডে পৌঁছানোর আগেই ধ্বংস করার দাবি জানিয়েছে তেলআবিব। তেহরান বলেছে, ইসরায়েলি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করা হয়েছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইরানের ছোড়া ৯৯ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনকে ধ্বংস করা হয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
ইরান এই হামলার ঘটনার পর আপাতত ইসরায়েলি হামলার ঘটনায় সৃষ্ট উত্তপ্ত পরিস্থিতি আর বাড়াতে চায় না বলে বিশ্ব নেতাদের জানিয়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে ইরানের স্বার্থের ওপর নতুন করে কোনও ধরনের আগ্রাসন চালানো হলে তাৎক্ষণিকভাবে তার কঠোর জবাব দেওয়া হবে বলে হুঙ্কার দিয়েছে তেহরান।
মঙ্গলবার কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, ‘‘আমরা স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিচ্ছি, ইরানি স্বার্থের বিরুদ্ধে যে কোনও অপরাধীর ন্যূনতম পদক্ষেপ অবশ্যই কঠোর, বিস্তৃত এবং বেদনাদায়ক প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে মোকাবিলা করা হবে।’’
আর ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর চিফ অব স্টাফ হারজি হালেভি বলেছেন, গত ১ এপ্রিল দামেস্কে ইরানের দূতাবাস ভবনে বোমা হামলার প্রতিশোধে ইসরায়েলের ওপর ইরানের হামলার পাল্টা হামলা চালানো হবে। এটা একেবারে নিশ্চিত। এই বিষয়ে আরব বিশ্বের দেশগুলোকে ইতিমধ্যে ইসরায়েল জানিয়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।