অনলাইন ডেস্ক : কৃষিজমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটা ও ভিজিএফের চাল বিতরণে অনিয়মের সংবাদ সংগ্রহের সময় তিন সাংবাদিককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার মুলঘর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. ওহিদুজ্জামান। এ সময় এক সাংবাদিককে তিনি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে গলা ধাক্কা দিয়ে পরিষদের বারান্দা থেকে ফেলে দেন। সোমবার (৮ এপ্রির) দুপুরে সদর উপজেলার মুলঘর ইউনিয়ন পরিষদে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সাংবাদিক সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করলে রাতে ইউপি চেয়ারম্যান ওহিদুজ্জামানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রাজবাড়ী সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইফতেখারুল আলম প্রধান বলেন, সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের হলে মুলঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ মো. ওহিদুজ্জামানকে রাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে।
লাঞ্ছিত হওয়া সাংবাদিকরা হলেন- মাছরাঙ্গা টেলিভিশন ও প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি ইমরান হোসেন মনিম, দৈনিক গণকন্ঠের জেলা প্রতিনিধি আতিয়ার রহমান ও দৈনিক সময়ের কাগজের জেলা প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম।
এ ঘটনায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, মুলঘর ইউনিয়ন পরিষদের বাড়ান্দায় ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মো. ওহিদুজ্জামান তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন এবং অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করতে থাকেন। একপর্যায়ে পরিষদের বারান্দা থেকে গলা ধাক্কা দিয়ে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের প্রতিনিধি ইমরান হোসেন মনিমকে নিচে ফেলে দেন।
এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট খান মো. জহুরুল হক, সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার আব্দুল মতিন, সহ-সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৌমিত্র শীল চন্দন, রাজবাড়ী জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি লিটন চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা, যুগ্ম সম্পাদক রুবেলুর রহমান, রাজবাড়ী রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি হেলাল মাহমুদ, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম রাজবাড়ী জেলা শাখার সভাপতি কবির হোসেনসহ জেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা।
মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের প্রতিনিধি ইমরান হোসেন মনিম জানান, তিনি এবং দুই সহকর্মী আতিয়ার ও শহিদুল মুলঘর ইউনিয়ন পরিষদে ঈদ উপলক্ষ্যে ভিজিএফের চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে ও কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার সংবাদ সংগ্রহে যান। প্রাথমিকভাবে তারা অনিয়মের সত্যতাও পান। এ সময় অনিয়মের বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ মো. ওহিদুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। একপর্যায়ে পরিষদের বারান্দা থেকে চেয়ারম্যান তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যার হুমকি দেন। এ সময় চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনী ও আনসার সদস্যরা তিন সাংবাদিকের ওপর হামলা করে ইমরান হোসেন মনিমের গলায় থাকা ৮ আনা ওজনের স্বর্ণের চেইন, সাংবাদিক শহিদুলের কাছে থাকা একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা ও সাংবাদিক আতিয়ারের কাছে থাকা নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়।
মুলঘর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, আমি সাংবাদিকদের সঙ্গে একটু উচ্চস্বরে কথা বলেছি। তবে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ বা সাংবাদিকদের ধাক্কা দেইনি।