বাঘায় পাড়া-মহল্লায় সাড়া ফেলেছে মানুষের ব্যতিক্রমী গরু ও খাসির “গোশত”সমিতি

মোহাঃ আসলাম আলী,স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশে সামাজিক,সাংস্কৃতিক,ধর্মীয় ও ক্রীড়াসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষেরই দু-একটি করে সমিতি রয়েছে। তারমধ্যে সমসাময়িক সময়ে লোকজনের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে গরু/ খাসির “গোশত” সমিতি। প্রথমদিকে এ সমিতির কথা শুনে অনেকেই বিভিন্ন মন্তব্য করলেও বর্তমানে লোকজন এ সমিতি থেকে উপকৃত হওয়ায় বাঘায় এর প্রচলন ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাঘায় গ্রাম,পাড়া বা মহল্লায় ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে এ ধরনের গোস্তের সমিতি গঠন করা হয়। এ সমিতির সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন গ্রামের মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে,প্রতিবছর বাড়ছে গোস্তো সমিতির সংখ্যা। প্রতিটি সমিতির সদস্যসংখ্যা ৩০ থেকে ৭০ জন পর্যন্ত হয়ে থাকে।

সমিতির অন্তর্ভুক্ত প্রতিজন সদস্য মাসে মাসে সমিতিতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা রাখেন। বছর শেষে ঈদুল ফিতরের ঈদের আগে জমাকৃত অর্থ একত্র করে পশু কেনা হয়। ঈদের দিন বা তার দু-একদিন পূর্বেই এই পশু জবাই করে গোশত সমিতির প্রত্যেক সদস্যকে ভাগ করে দেওয়া হয়। এতে ঈদ উদযাপনের ক্ষেত্রে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের ওপর আর্থিক চাপ যেমন কমে,তেমনি ঈদের আগে সবাই বাড়তি আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারেন।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে,এই সমিতির নাম ‘গোশত বা মাংস সমিতি’। অনেকের কাছে ‘গরু/খাসি সমিতি’ নামেও পরিচিত।

আরও পড়ুনঃ   মাত্র ১৪০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৭৬ তরুণ-তরুণী

সারা দিন ভ্যান ও রিকশা চালিয়ে সংসারের ঘানি টানেন বাঘা পৌর সদরে বানিয়াপাড়া গ্রামের রুস্তম আলী,আব্দুর রহমান,বাদশা আলম,মমিনুল হক,মুজাম আলী,রকসেদ আলী ও আবু তালেব। তারা কেউ কেউ সন্তানের লেখাপড়া,চিকিৎসা ও খাবার খরচসহ সব মিলিয়ে তাদের অনেকটা নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থায় সংসার চালাতে হয়। ঈদ এলে সবার কাপড়-চোপড় আর তেল-সেমাই-চিনি কিনতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় তাদের। এ ছাড়া আদরের সন্তানদের বায়না থাকে ঈদের দিন গোশত খাওয়ার। কিন্তু ভ্যানচালক বাবার ঈদের দিনে সন্তানদের গোশত খাওয়ানোর ইচ্ছা থাকলেও সাধ্যে কুলায় না। ইতিপূর্বে ঈদের দিন সন্তানদের বায়না পূরণ করতে না পেরে গত দুই বছর যাবৎ “গোশত সমিতি’র সদস্য হয়েছেন।

বানিয়াপাড়া “গোশত” সমিতির মূল উদ্যোক্তা মোঃ আলতাব আলী জানান,আমাদের সমিতিতে এবার ৬৩ জন সদস্য ছিল। প্রতিমাসে সদস্য প্রতি ৩০০ টাকা করে অর্থ জমা রাখেন। বছর শেষে রোজার ঈদের পূর্বে জমানো টাকা দিয়ে গরু কিনে জাবাই করে সমিতির সদস্যদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। তুলনামূলক বাজার দরের চেয়ে কম দামে এবং এক সাথে বেশি পরিমাণ গোশত পেয়ে প্রত্যেকেই খুব খুশি হয়েছে। সমিতির সদস্য রস্তম আলী বলেন,আমি কোনদিন ৩ কেজি গোস্ত কিনতে পারিনি। কিন্তু এবার সমিতি করে আমি ৫ কেজি গোস্ত পেয়েছি। এজন্য আমার খুব ভালো লাগছে।

আরও পড়ুনঃ   শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের প্রতি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রীর শ্রদ্ধা

পৌরসভা ছাড়াও উপজেলার বাজু বাঘা, বাউসা,আড়ানী,চকরাজাপুর,মনিগ্রাম,পাকুড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের আরও অনেক সমিতি গড়ে উঠেছে। শবেকদরের দিন থেকে শুরু হয় সমিতির পশু জবাইয়ের কাজ। চলে ঈদের দিন পর্যন্ত।

বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাস আলী বলেন, এলাকায় গোশত সমিতি ব্যাপক সাড়া পড়েছে ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ সমিতির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গরুর গোস্তের উচ্চমূল্য থাকলেও সমিতির কারণে ঈদুল ফিতরে এখন ঘরে ঘরে গরুর গোশত রান্না হয়। এ ধরনের সমিতির কারণে সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ আরও জোরদার হয়। বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাড: লায়েব উদ্দিন লাভলু বলেন,সারা বছর একটু একটু সঞ্চয় ঈদের দিনে তাদের বেশ বাড়তি আনন্দ দেয়। গোশত ভাগবাটোয়ারা করা,গোশত রান্না করার মধ্যেও এক ধরনের আনন্দ দেখা যায়। বিশেষ করে এ ধরনের কাজে নারীদের অংশগ্রহণ সমিতিকে আরও মর্যাদাপূর্ণ করে তুলেছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন,সকল শ্রেণির লোকজনের অংশগ্রহণে এ ধরনের গোশত সমিতি সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেই সঙ্গে সকলের মধ্যে ঈদের আনন্দটাও অনেক বাড়িয়ে দেয়। এটা খুবই ইতিবাচক উদ্যোগ। যে সকল ব্যক্তিদ্বয় এ ধরনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানান তিনি।