অনলাইন ডেস্ক : রাজধানীর উত্তরায় এক তরুণীকে অস্ত্রের মুখে ফ্ল্যাটে আটকে রেখে ধর্ষণের ঘটনার রেশ না কাটতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আরেক তরুণীকে শেকলে বেঁধে আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতনের পর সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করলে পুলিশ মোহাম্মদপুরে একটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠায়। এ ঘটনায় গত শনিবার রাতেই ওই তরুণী মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় জড়িত তিন যুবক ও সহায়তা করার অভিযোগে এক নারীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।প্রাথমিকভাবে তাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেন-সান (২৬), হিমেল (২৭) ও রকি (২৯)। নারীর নাম সালমা ওরফে ঝুমুর (২৮)। তার স্বামী প্রবাসে থাকেন।
রোববার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের চারজনকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রাত পৌনে ১২ টায় গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এইচএম আজিমুল হক। তিনি সময়ের আলোকে বলেন, আজ সোমবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘটনার বিস্তারিত জানানো হবে।
পুলিশ জানায়, মোহাম্মদপুরের নবীনগরে চার তলার একটি ফ্ল্যাটে টানা ২৫ দিন আটক রাখার এ ঘটনায় সহায়তা করা এবং ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করার অভিযোগ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. তোফাজ্জল হোসেন সময়ের আলোকে বলেন, ২৩ বছর বয়সি ওই তরুণীকে যেভাবে পাশবিক নির্যাতনের পর সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। তিনি আরও বলেন, ওই তরুণী নির্যাতনের যে ভয়াবহ বর্ণনা দিয়েছে, তা অনেকটাই মুখে বলা সম্ভব নয়। ওই তিন যুবক প্রায় ২৫ দিন তাকে আটকে রেখে ধর্ষণের পাশাপাশি পাশবিক নির্যাতন চালায়।
এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, নবীনগরে সালমার চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে গত ৫ মার্চ থেকে তাকে আটকে রাখা হয়েছিল। ওই তিন যুবকের ধর্ষণের ঘটনায় সহায়তাও করেন সালমা।
মামলায় ধর্ষণের শিকার নারী উল্লেখ করেন, মোহাম্মদপুরে নবীনগরে সহায়তাকারী সালমার চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে গত ৫ মার্চ থেকে তাকে আটকে রাখা হয়েছিল। ওই তিন যুবককে ধর্ষণের ঘটনায় সহায়তাও করেন সালমা।
তিনি আরও বলেন, বাবা মায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ এবং পরে তারা অন্যত্র বিয়ে করায় ওই তরুণী তার বড় বোনের বাসায় থাকছিলেন। সে সময় ভগ্নিপতির মাধ্যমে এক যুবকের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে ওই যুবকের মাধ্যমে এক প্রবাসীর স্ত্রী সালমা ওরফে ঝুমুরের সঙ্গে পরিচয় হয় তরুণীর। এক পর্যায়ে বোনের বাসা ছেড়ে তার (সালমা) সঙ্গে নবীনগরের ভাড়া ফ্ল্যাটে ওঠেন ওই তরুণী। পরে ঝুমুরের মাধ্যমে সান নামের এক যুবকের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নবীনগরের ওই বাসায় গত ৩ ফ্রেব্রুয়ারি প্রথম ধর্ষণ করেন সান।
সর্বশেষ গত ২৭ ফ্রেব্রুয়ারি একইভাবে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করার পর বিয়ের জন্য চাপ দিলে সান তার পরিবারের সাথে কথা বলে বিয়ের আশ্বাস দেয়। বিয়ে না করলে থানায় গিয়ে মামলা করার কথা বললে সান যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, গত ৫ মার্চ দুপুরে দুই বন্ধু হিমেল ও রকিকে নিয়ে ওই বাসায় এসে সান তাকে সারপ্রাইজ দেবে বলে চোখ বন্ধ করতে বলে। সালমা এ সময় খাবার আনার কথা বলে রুম থেকে বের হয়ে যায়। সানের কথায় চোখ বন্ধ করলে তারা তিনজন মিলে তার হাত, পা ও চোখ বেঁধে ফেলে এবং মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে ফেলে। পরে সালমার কথায় হিমেলকে পাহারায় রেখে অন্যরা শেকল আনার জন্য বাইরে চলে যায়। এ সময় একা পেয়ে হিমেল তাকে ধর্ষণ করে। সেই দিন থেকে শেকল দিয়ে তার হাত ও পা বেঁধে রাখা হয় বলে মামলায় তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন, এক দিন পর ৭ মার্চ রকি বাসায় এসে তাকে ধর্ষণ করে। খাবার এবং রাথরুমে যাওয়া সময় বাসায় থাকা সালমা শুধু পায়ের শেকল খুলে দিত। পরদিন সানের ধর্ষণের চিত্র ভিডিও তার মোবাইল ফোনে ধারণ করেন সালমা। এরপর থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ওই তিনজন তাকে ধর্ষণ করেন এবং একে অপরের ভিডিও করেন। এসময় সালমা তাদের সহায়তা করে।
গত ৩০ মার্চ রাতে বাসায় কেউ না থাকার সুযোগে জানালা দিয়ে ওই তরুণী চিৎকার করলে স্থানীয় এক ব্যক্তি বিষয়টি জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এ কল করে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ওই বাসায় হাত-পায়ের শেকলে বাঁধা অবস্থায় তরুণীকে উদ্ধার করে পুলিশ।