মোহাঃ আসলাম আলী,স্টাফ রিপোর্টার : মোগল আমলের নিদর্শণ গুলোর অন্যতম স্থাপত্য বাঘার প্রাচীনতম ঐতিহাসিক নারী মসজিদ। কালের স্বাক্ষী হিসেবে কোন রকম দাঁড়িয়ে আছে সাড়ে তিনশ বছরের পুরোনো মসজিদটি। সংস্কারের অভাবে এখন জরাজীর্ণ। মসজিদটি শৈল্পিক স্থাপনার এখন অযত্ন আর অবহেলার ছাপ মসজিদটি। দেয়ালের পলেস্তার খসে পড়েছে। ভেঙ্গে গেছে ভবনের বেশ কিছু অংশ। বছর জুড়ে পর্যটক ও দর্শনার্থীরা মসজিদটি দেখতে এলেও ঐতিহ্যের স্বাক্ষী এ স্থাপনাটি সংরক্ষণে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই।
জানা গেছে,রাজশাহী শহর থেকে-৪৮কিঃমিঃ পুর্ব-দক্ষিণে বাঘা উপজেলা সদরে ইসলামি একাডেমি উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কৃষি কলেজের উত্তরে হযরত শাহ আব্দুল হামিদ দানিশ মন্দ (রহ:) মাজার সংলগ্ন এলাকায় ৩ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটির অবস্থান। ৩০ ফুট বর্গাকার মসজিদটির দের্ঘ-প্রস্থ-৩০ বর্গফুট। চার পার্শ্বের দেয়াল-৩ ফুট-৬ ইঞ্চি চওড়া। উত্তর ও দক্ষিণে লম্বাকৃতির মসজিদের পুর্বদিকে রয়েছে খিলান আকৃতির প্রবেশপথ।
মসজিদের প্রবেশ পথের মুল দরজার উপর ফার্সি ভাষায় পাথর খচিত শিলালিপি রয়েছে। পাথর খচিত এ শিলালিপি এক সময় চুরি হয়ে যায়। চুরির সঙ্গে দুই ব্যক্তি পঙ্গুত্ব বরণ করলে রাতের আধারে মাজার এলাকায় আাবার রেখে যায়। পঙ্গুত্ব বরণকারী ব্যক্তিদ্বয় মৃত্যুর আগে পাথর চুরির সেই বিষয়টি শিকার করেন তারা। বর্তমানে ওই পাথর আগের স্থানে সংরক্ষণ করা হয়েছে। রইশ পরিবারের সদস্য খন্দকার মনোয়ারুল ইসলাম বলেন,হযরত শাহ মোহাম্মদ রফিক ( রহ:) এর মৃত্যুর পর ওয়াকফ এষ্টেটের মতাওয়াল্লি (ষষ্ট রইশ) সাইদুল ইসলাম এর আমলে মহিলাদের নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদটি নির্মান করা হয়। মসজিদে যাতায়াতের রাস্তাটি বর্তমানে পাকা করা হলেও অজুখানা ও স্বাস্থ্যসম্মত চৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। ফলে পর্যটকদের সমস্যায় পড়তে হয় বলে জানান তিনি। ঐতিহ্য রক্ষায় মসজিদটি সংস্কার করা দরকার।
বাঘা ওয়াকফ এষ্টেটের বর্তমান মুতাওয়াল্লী (রইশ) খন্দকার মুন্ছুরুল ইসলাম জানান-১৯৯২ সালে মসজিদটি রক্ষনা-বেক্ষণ ও সংস্কারের দায়িত্ব দিয়েছি প্রত্নতত্ন বিভাগ। পরে আর কোন খোঁজ রাখেনি তারা।
বাঘা ওয়াকফ এষ্টেটের তথ্যমতে,হযরত শাহ মোয়াজ্জেম ওরফে হযরত শাহ-দৌলা (রহ:) এর ছেলে,হযরহ শাহ আব্দুল হামিদ দানিশ মন্দ (রহঃ) এর মৃত্যুর পর তার তৃতীয় সন্তান মাও: শাহ আব্দুল ওয়াহাব (রহ:) বাঘার মুতাওয়াল্লীর দায়িত্বভার গ্রহন করেন। ঐ সময় দিল্লির সম্রাট শাহজাহানের পাঠানো শাহী ফরমানযোগে-৪২টি মৌজা মাদদ মাসস্বরুপ দান লাভ করেন। তখন শালিমানা-৮ হাজার টাকা।
হযরত ওয়াহাবের মৃত্যুর পর তার দুই ছেলের মধ্যে হযরত শাহ মোহাম্মদ রফিক (রহ:)-১০২৮ হিজরী সালে সম্পতি ওয়াকফ করেন। ওয়াকফ এষ্টেটের সম্পিতে নির্মাণ করা হয় নারী মসজিদ। তথ্যমতে প্রায়-৫০০ বছর পুর্বে ৫ জন সঙ্গি-সহ সুদুর বাগদাদ থেকে ইসলাম প্রচারের লক্ষে বাঘায় আগমন করেছিলেন,হযরত শাহ মোয়াজ্জেম ওরফে শাহ-দৌলা (রহ:)। তিনি বসবাস শুরু করেন পদ্মা নদীর পাশে কসবে বাঘা নামক স্থানে।
আধ্যাতিক শক্তির বলে ওই এলাকায় জনগণের কাছে ইসলাম প্রচারে ব্যপক সফলতা লাভ করেন তিনি। ওই সময় হযরত শাহ মোয়াজ্জেম ওরফে শাহ-দৌলা (রহ:) এর অনেক অলৌকি ঘটনা তথা নিদর্শণ দেখে ভিন্ন ধর্মের লোকজন দলে-দলে তার কাছে এসে ইসলাম ধর্মে দিক্ষা নেন।