রাবির হলকক্ষ থেকে ছুরিকাঘাতে আহত অবস্থায় এক শিক্ষার্থীকে উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) একটি হলের কক্ষ থেকে আহত অবস্থায় এক শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারের সময় তার শরীরে অসংখ্য ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল। শুক্রবার (২২ মার্চ) রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম (এসএম) হলের ৩৪১ নম্বর কক্ষে এই ঘটনা ঘটে।
আহত জয়দেব সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ও শাহ্ মখদুম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তার বাসা নোয়াখালী জেলায়। তিনি ওই হলের ৩৪১ নং রুমে থাকেন।

তার শিক্ষক, সহপাঠী ও রুমমেটের দাবি, সে অনেকদিন ধরেই অস্বাভাবিক আচরণ করছিল। হল প্রাধ্যক্ষ জানান, তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ৪ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়েছে। সে বুকের একটা সমস্যার কারণে ইউটিউব দেখে ঔষুধ খেতো।

আহত শিক্ষার্থীর রুমমেট সাজ্জাদ বলেন, অনেকদিন ধরে সে অস্বাভাবিক আচরণ করছিল। আমি খবর তার বাসায় খবর দেওয়ার পর তার ছোট ভাই এসেছিল। আজ একসাথে খাওয়া-দাওয়াও করেছে তারা।

একই হলের ৩৪৬ নাম্বার কক্ষের আবাসিক এবং ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগ বলেন, আমি আমার রুম থেকে এসে দেখি, ও (জয়দেব) নিজের বুকে নিজেই ছুরি চালাচ্ছিলো আর গালাগালি করছিলো। শোরগোল শুনে তখন অনেকেই এসে পড়েছিল ওখানে। প্রথমে এই অবস্থা দেখেই আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। (ভয়ে) আমি দৌড়ে চলে গিয়েছিলাম ওখান থেকে। তখন রুমের ভিতরে কাউকে দেখিনি।

আরও পড়ুনঃ   রাবি’র বিভিন্ন আবাসিক হলের মসজিদে কোরআন শরীফ পোড়ানোর মূলহোতা গ্রেপ্তার

এরপর অনেকেই রুমের সামনে চলে আসলো। আর জিলানী রুমের ভিতরে ঢুকলো। একই হলের আরেক আবাসিক এবং ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা কয়েকজন রুমের মধ্যে ঢোকার পরে দেখি, ছুরিটা বের করে এক জায়গায় রাখা হয়েছে এবং জয়দেব মেঝেতে শুয়ে আছে। ওর ছোটো ভাই পাশেই দাড়িয়েছিল। সে ওখান থেকে পালায়নি। ছুরিটা বের করার পরে আমরা একটা কাপড় দিয়ে ক্ষতস্থান ঢেকে দিয়েছিলাম, যাতে রক্ত বেশি বের না হয়। এরপর আমি, আকাশসহ কয়েকজন তাকে নীচে নামিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি।

তিনি আরো বলেন, জয়দেব মেঝেতে শোয়া অবস্থায়ই তার ছোটো ভাইকে উদ্দেশ্য করে বলেতেছিল,‘তুই আমাকে ছুরি মারছিস’। তার ভাই এটা অস্বীকার করে বলতেছিল, সে নিজেই নিজের বুকে ছুরি মেরেছে। এভাবে তারা দুই ভাই একে অপরকে দোষারোপ করতেছিল। ঘটনার সময় রুমের মধ্যে জয়দেবের রুমমেটরা কেউ ছিলোনা। আমরা যখন রুমের মধ্যে প্রবেশ করি, তখন তারা দুই ভাই-ই শুধু রুমের মধ্যে ছিলেন। এখন কে যে ছুরিটা মেরেছে, সেটা সিউর না। আশেপাশের রুমের কেউ ভয়ে বের হয় নাই। অন্য রুমের শিক্ষার্থীরা এসে তাকে উদ্ধার করে। অনেকক্ষণ ধরে চিল্লানো শুনেই আমরা ঘটনাস্থলে আসি।

আরও পড়ুনঃ   বাগমারায় বিএসটিআইএ’র নকল সিল ব্যবহার, ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা

এ বিষয়ে শাহ মখ্দুম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. রুহুল আমিন বলেন, সে এখন রামেক হাসপাতালে ভর্তি আছে। হলের শিক্ষার্থী, পুলিশ ও চিকিৎসকরা সবাই যথেষ্ট কো-অপারেট করেছে। সে নাকি বেশ কিছুদিন থেকেই অস্বাভাবিক আচরণ করছিলো। তার এক রুমমেটও এ কথা বলেছে।এটা তার বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও জানে।

তিনি আরো বলেন, কে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে, সেটা এখনো নিশ্চিত না। জয়দেব নাকি বলেছে যে, তার ভাই তাকে আঘাত করেছে। আর হলের কিছু শিক্ষার্থীরা বলছে, সে নিজেই নিজের শরীরে আঘাত করেছে। মতিহার থানার ওসির জিজ্ঞাসাবাদে সে বলেছে, সে বুকে চাপ ধরে থাকার কারণে ইউটিউব দেখে স্নায়ুবিক আর ব্লাড প্রেশারের ঔষুধ খায়। সে আহত হলেও কথা বলেতেছিল। মনে হচ্ছিল, বড় কোনো সমস্যা হয়নি। আমরা হল প্রশাসন আপাতত রুমটা সিলগালা করে রেখেছি। আর পুলিশ কক্ষ থেকে আলামতগুলো সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছে।