ফরিদপুর প্রতিনিধি : ফরিদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত জেনারেল হাসপাতালের আঙিনায় মিলেছে গাঁজা গাছের সমাহার। উদ্ভিদবিদ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে এসব গাছের বিষয়ে জানা যায়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর গাঁজা গাছ সাদৃশ্য গাছগুলোকে দুই ভাগে বিভক্ত করলেও সেখানে গাঁজা গাছ রয়েছে কি না তা নিশ্চিতভাবে জানাতে পারেনি। তাঁরা নমুনা নিয়ে গেছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর নিশ্চিত তথ্য জানাবেন।
আজ সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের উত্তর দিকে স্টাফ কোয়ার্টারের পথের দুই ধারে ও হাসপাতাল থেকে মসজিদে যেতে পথের ধারে অসংখ্য গাঁজা গাছ সাদৃশ্য গাছ রয়েছে। কোনো কোনো গাছ কয়েক ফুট লম্বা হয়েছে। যেগুলো থেকে গন্ধও ছড়াচ্ছে। সার্জারি বিভাগের উত্তর পাশে বদ্ধ জায়গাও ছোট-বড় অসংখ্য গাছ রয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতালের যেখানে-সেখানে মেডিকেল বর্জ্য ও হাসপাতাল বর্জ্যের স্তূপ দেখা যায়।
এর আগে ‘হাসপাতাল নয় যেন গাজার বাগান’ ক্যাপশনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাসপাতালটির ভিডিও ভাইরাল হয়। এরপর আজ সকাল থেকে অনেকেই সেখানে ভিড় করেন। এমনকি সিভিল সার্জন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি টিম পরিদর্শন করেন এবং নমুনা সংগ্রহ করেন।
ইমরোজ জামান নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘এখানে ভাং গাছ রয়েছে, তার মাঝে গাঁজার গাছও রয়েছে। তবে দুটি গাছই নেশাজাতীয় দ্রব্য। গাঁজায় নেশা বেশি হয়, ভাং গাছে নেশা একটু কম হয়ে থাকে। কেউ হয়তো গাজা সেবন করে এখানে বীজ ফেলে রেখেছে, সেখানে গাছগুলো হয়েছে।’
হাসপাতালের স্টাফ কোয়ার্টারের বাসিন্দারা জানান, প্রায় চার-পাঁচ বছর ধরে এই গাছগুলো বেড়ে উঠেছে। আগে আরও বেশি ছিল। অনেকগাছ কেটে তাঁরা পরিষ্কার করেছেন। তারপর আবার হয়েছে। সকলের সামনেই বেড়ে উঠেছে। কিছু ছেলেপুলে এগুলো ছিঁড়ে নিয়ে রস করে খায় বলে তাদের জানিয়েছে।
তবে গাছগুলোর আকৃতি-প্রকৃতি দেখে ভাং ও গাঁজা গাছে বিভক্ত করে নিশ্চিত করেন সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক দীপংকর দাস। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গতকাল আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। গাছগুলো দেখে আমাদের সন্দেহ রয়েছে। প্রাথমিক দৃষ্টিতে মনে হয়েছে, এখানে গাঁজা ও ভাং গাছ রয়েছে। গাছগুলো একই প্রজাতির। যেখানে স্ত্রী গাছকে বলা হয় গাঁজা এবং পুরুষ গাছকে বলা হয় ভাং। তবে, এগুলো দেখে লাগানো মনে হয়নি, হয়তো প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠেছে।’
এদিকে হাসপাতালের এমন পরিবেশ দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন তরুণ সংগঠক আবরার নাদিম ইতু। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে তিনিও বন্ধুদের নিয়ে দেখতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘এই হাসপাতালে আমরা যেকোনো সমস্যা নিয়ে আসি। কিন্তু এসে দেখি চরম অব্যবস্থাপনার মধ্যে রয়েছে। অসংখ্য বর্জ্য ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। আবার গতকাল দেখেছি, এখানে গাজার বাগান রয়েছে। এসেও দেখেছি। এখন গাছগুলো যদি সত্যিই গাজা হয়ে থাকে তাহলে আমাদের জন্য লজ্জাজনক।’
রোববার ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. ছিদ্দীকুর রহমানের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি আঁতকে উঠে বলেন, ‘কি বলেন! আমি গাঁজার গাছ জীবনেও দেখি নাই। সোমবার সকালেই আমি নিজে গিয়ে দেখব।’
কথামতো আজ সোমবার বেলা ১০টার দিকে টিম নিয়ে পরিদর্শনে আসেন হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক ও সিভিল সার্জন ডা. সিদ্দিকুর রহমান। পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো দিন গাঁজা বা ভাং গাছ দেখিনি, এ কারণে সঠিকভাবে বলতে পারব না। মাদক অধিদপ্তর গাছগুলোর নমুনা নিয়ে গেছে, পরীক্ষা শেষে তাঁরাই বলতে পারবে।’
এ বিষয়ে কথা হয় জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামীম হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গাজা সাদৃশ্য গাছগুলো কেমিক্যাল পরীক্ষা না করেই নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না যে, এগুলো আসলে গাঁজা বা ভাং গাছ কি-না। হোয়াইট ক্যানাবিস টাইপের গাছও হতে পারে, যেগুলো বন্যভাবে যেখানে-সেখানে হয়ে থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা যদি কারও ব্যক্তিগত জায়গায় হতো তাহলে আমরা আইনগত প্রক্রিয়ায় যেতে পারতাম। যেহেতু এটি সরকারি প্রতিষ্ঠান সেহেতু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের অনুরোধ করে তাহলে আমরা সেন্ট্রাল কেমিক্যালে এগুলোর নমুনা পাঠাব এবং পরীক্ষা শেষে নিশ্চিত করে জানাতে পারব।’